Be Our Friend

সম্পৃক্ত

✎লেখায়ঃ গৌরব সরদার



দি আমরা আমাদের জীবনটাকে ছোট গল্পের সাথে তুলনা করি তাহলে প্রেম তার অনেক বড় অধ্যায়ে অন্তত আমার জীবনে তো বটেই আপনারটা আপনি ভেবে দেখুন অধ্যায় না পংক্তি। ছোটবেলা টা কেটেছে আমার মামার বাড়িতে বাবার বদলির চাকরি কারণে। মা ও থাকতো আমার সাথে পাছে বাবুর পড়াশোনার  ক্ষতি হয়। তখন আমার বয়স ওই ১৫ হবে আমি নবম শ্রেণীর  ছাত্র,অত্যন্ত বিচ্ছিরি রেজাল্ট করার একজন কৃতিত্বে উজ্জ্বল। যে মেয়ে প্রজাতিকে দূর থেকে দেখতে ভালোবাসতো সামনে যাওয়ার সাহস ছিলনা।
আমরা যদি আমাদের জীবনকে কয়েকটা ভাগে ভাঙ্গি স্কুলজীবন মনে হয় সবচেয়ে বেশি স্মৃতি জায়গা পাবে। সৌমেন নবম শ্রেণীর ছাত্র ,ছোট থেকেই কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা কিন্তু কেমিস্ট্রির সি ও বোঝেনা। তার নিরস জীবনে এই টি না বুঝলেও তার বিশেষ কোন ক্ষতি নেই।
জীবনটা  তার  অনেকটা চারদেয়ালে মোড়া, স্কুল থেকে বাড়ি এসে খেয়ে উঠতে না উঠতেই টিচারের আসার সময় হয়ে যায় তারপর আবার খাওয়া আবার ঘুম। আমি আজ থেকে প্রায় বছর দশেক আগের কথা ও বলছি। তা এই ধরুন ২০০৬। হ্যাঁ আমি জানি আপনি তখন "সিনচেন "আর ডোরেমনের
 মধ্যেই আছেন "বেনটেন" আর "ছোটা ভিম" এ ডুবো ডুবো করছেন।আপনার কষ্টটা আমি বুঝতে পারছি ,একা হাতে খেতে পারেন না খাইয়ে দিতে হয় আর এই হিরো গুলোকে দেখার জন্য কান্না জুড়ে দেন হয়তো এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু আমাদের গল্পের নায়ক সৌমেন তখন অনেক বড়। সে কান্নাকাটি  করে না।হ্যা ,বাঙালি সমাজে বড় হওয়ার লক্ষণ তথাকথিত প্রেমে পড়া সেটা আর হয়ে ওঠেনি।সুতরাং সমাজ আবার চোখে রাঙিয়ে বলতেই পারে, "দূর মরণ!বড়  আর হলো কই?"আচ্ছা আপনার কথামতো সে নাহয় ছোটই আছে।
নবম শ্রেণীর মাঝে হঠাৎই সে চার দেয়াল ফু্ড়ে অর্থাৎ বাবা-মার কড়া নজর থেকে বের হলো কি করে সেটাও একটা মজার ঘটনা। স্কুলে প্রথম দুটো মূল্যায়নে কিঞ্চিৎ ইচ্ছা করেই সে কম নাম্বার পেল কারণ তার সায়েন্সের  টিচার তাকে মারতো তবে সেও তার বদলা নিয়ে ছাড়লো স্যারকে তাড়িয়ে। তারপর গিয়ে উপস্থিত হল কুড়ি জনের মাঝে অংক শিখতে। সেখানে গিয়ে অংক ছাড়া মোটামুটি সবই শিখলো। কি করে পড়ার নাম করে বেরিয়ে ঘুরতে যেতে হয় ,সুখটান, বিয়ার এইসব তো আছেই। হ্যাঁ ওই পুঁচকে হিরোর অত পয়সা কোথায়? সম্বল বটে 5 টাকা! 
 এ'ভাবে এক মাস কাটলো। এখন আমাদের হিরো  বদলে গেছে, নিয়মিত সে  পড়তে যায় ,আবার ভদ্র ছেলের মত বাড়ি আসে।
আরে দাদা এটা কি করে হয়! ছেলে বখে গেল আবার ভাল ও হয়ে গেল, এটাও নাকি সম্ভব!ছেলেদের নিজেদের ওপরে কবে থেকে এত নিয়ন্ত্রণ ?বললেই হল গাঁজাখুরি গল্প শোনাচ্ছেন!আরে আজব তো আপনি আমায় ভুল তথ্য দিচ্ছেন কই। মানুষ দুটো কারণে ভদ্র হয়,এক, যখন সে প্রেমে পড়ে্‌ দুই, জীবনে যখন চিরসত্য সাথে পরিচয় হয়। আপনার কি মনে হয় আমাদের হিরোর কি সেই সময় হয়েছে? হয়নি। এবার শান্ত হোন। সৌমেন প্রেমে পড়েছে! সমস্যা কি? কিন্তু আপনার না মানে ইয়ে আপনাদের মতে, তাহলে তো সমাজের ছোট ছেলে বড় হয়েছে।গত এক মাসে যা করেছে তাতে বাঙালি সমাজ অনুযায়ী বড় হয়েছে। এখনকার ঘটনার জন্য ওকে পরিপক্ক যুবক বলা চলে। কি বলেন চলে কি চলে না? আরে মশাই ! আপনি তো বলতেই লে তবে তো জানতে পারবেন তা বটে তা বটে। 
তবে বলুন হা করে দেখছেন কি আমার আবার চা -টা ঠান্ডা হয়ে গেল আরেকবার করো। 
তা মেয়েটির নাম  হল "সম্প্রীতি"। আমার আবার গুম এর থেকে রুপা বেশি মজার  সত্যি বললাম ওই মন দেখে ওই দেখে সেই দেখে এইসব গল্প বাস্তব সমাজের মানুষের উদার বুজাতে কাজ করে কি করে বলুন। আমি তো উদার দেখাতে পারি না তাই সত্যিই বললাম।
ও এসেছিল বাবার সাথে ভর্তি হতে আর তারপর থেকে ও একাই যাতায়াত করত। ওর আর আমার বাড়ি ছিল আমাদের জীবনের মতই  বিপরীত দিকে। ক্লাস শুরু ৩০ মিনিট আগে চলে যেতাম, হা করে তাকিয়ে দেখতাম । তখন  তো আর ফেসবুকের চল নেই এখনকার মতন ।আর মোবাইলফোন ও স্বপ্নের অধিক! সপ্তাহে তিনদিন পড়া থাকতো আর ওই দিনগুলি ছিল আমার কাছে প্রতিদিন নতুন করে ওর প্রেমে পড়ার নতুন নতুন কারণ খোঁজার অজুহাত এর মতন। ওর সাথে কথা বলার জন্য  ক্লাসের সব ছেলেরা উৎসুক থাকতো আর আমার সাহস? তা কোনদিনও কুলায়নি।
হিউম্যান সাইকোলজি বলে তুমি যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো সবচেয়ে বেশি ভয় ও তুমি তাকেই পাও।সেটা তাকে হারানোর হতে পারে অথবা অবহেলার হতে পারে।
 মনে আছে , সেদিন বেশ মেঘ করেছিল। ছুটির পর বাড়ির যাওয়ার তোড়জোড় করছিলাম। অমনি, হঠাত, 
-"কিগো ক্যাবলা কান্ত,তুমি কি আমাকে দূর থেকে দেখেই খুশি নাকি কথাটাও বলতে চাও আমার সাথে?"

হঠাৎ সৌমেনের মাথায় বিদ্যুত খেলে গেল গলাটা খুব চেনা খুব কাছের যেন সম্প্রীতির না! আরেকটু হলেই আমাদের ক্যাবলাকান্ত হিরো নিজের স্নায়ুর চাপ সামলাতে না পেরে ড্রেনে পড়ে যেত। নিজেকে সামলে নিয়ে সে বুঝতে পারল গলার আওয়াজটা পিছন দিক থেকে আসছে। পিছন দিকে
 তাকিয়ে দেখল সম্প্রীতি তার দুই বন্ধুকে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
-আমাকে প্রপোজ করতে শুভকেও একটা হোচট খেতে হয়েছে আর তুমি কোথাকার হরিদাস পাল।
 -না মানে ইয়ে ব্যাপারটা হলো কি! মানে আসলে_
-আসল নকল থাক ,এখন আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। এখনই তো ক্যাবলার মত তার নামটা জিজ্ঞেস করবে ছাড়ো বলেই দিচ্ছি ওর নাম শুভ তুমি এবার কাটো তো।
সেদিন খুব কেঁদেছিলাম পরেরদিন এক্সট্রা ক্লাস করতে যাইনি। এক সপ্তাহ পর আবারো সেই গোলাপ নিয়ে আমি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি তখন কিন্তু ওর জন্য না আর আগেও যায়নি আজ।
হঠাৎ বলে উঠল, "তুমি আমাকে এই ভালোবাসো?!!"
 -আমি হকচকিয়ে উঠলাম না মানে কেন?
-সে হঠাৎই বলে উঠলো শুভর হাত-পা ভালো আছে দেখছি। তুমি দেখছি ওকে কিছুই বলনি।
-হ্যাঁ কেন বলব জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসা তো  আর হয় না।
-দুদিন পড়তে আসোনি কেন?
-ইচ্ছা! তোমার কি?
-বাবুর আবার ইচ্ছাও হয় বুঝি!
-হ্যাঁ হয় তোমার কি তোমার মতো নির্লজ্জ বিবেকহীন না আমি।
-আমি বুঝি নির্লজ্জ?
-তাছাড়া আবার কি?
-যার মন ভাঙতে হৃদয় আটকায় না সে নির্লজ্জ ছাড়া কি?
-তাই জন্য বুঝি কেঁদে চোখ ঢেকে ফেললে?
-না আমার এত সময় নেই তোমার মতন মেয়ের জন্য কাঁদিনা।
-সত্যি ?
_স্যার ডাকছে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে চল।
সেদিনকার ক্লাসটা সৌমেন এর খুব খারাপ গেল মার খেতে হল ছেলের কাছে। হ্যাঁ এটা হয় প্রেমে পরলে, পড়াশোনার সাথে সম্পর্কটা একটু কমে যায়। ছুটির পর-
হবা "চরণ"।
-তোমার সাহস হলো আমায় "হবা চরণ" বলার।
-আচ্ছা তাহলে "গবা চরণ" বলি।
-তুমি কথা বলবে না আমার সাথে।ওই যে শুভ ওর কাছে যাও। আমি তোমার সাথে কথা বলব না তুমি আসতে পারো।
-হ্যাঁ তুমি বললে আমি যেতেই পারি কিন্তু যাওয়ার আগে একটা কথা বলি কোনদিনও কি ভেবে দেখেছো স্যারের বাড়িতে আমার বাড়ি দূরত্ব 5 মিনিট তাহলে কেন আধঘন্টা আগে আসতাম? 

বাকি ঘটনাটা  পাঠকদের কল্পনার উপর ছাড়া হইল। কারণ র
রোজ ই এরকম গল্প শুরু হয় আবার শেষ ও।
-কিগো সম্প্রীতি, বৌদির চা টা কত দূর দেখো একবার। (১৪ বছর পর)
                     

Comments

Popular Posts

Wave Us @