Be Our Friend

রক্তকরবী-------পর্বঃ০৪

  ✎মহিরূহ সেনগুপ্ত



.."হ্যাঁ! অনিন্দ, অফিসে কোনো অসুবিধে নেই তো,সব ঠিক ঠাক চলছে তো?" আমি একটু স্বস্তির সাথে উত্তর দিলাম,হ্যাঁ হ্যাঁ স্যার সব ঠিক আছে।এতক্ষনে আমার রাগটা একটু পরেছে,তাই জিজ্ঞেস করলাম এবার,কি হয়েছে স্যার? তখন বল্লেন বিপদে পরেছেন,জানতে পারি,কি হয়েছে!
    
         উত্তরে তিনি যা বল্লেন তাতে আমার চোখের সামনে ঘন আঁধার নেমে এল। তিনি বল্লেন,"আরে আমার শালির মেয়ে 'করবী'-কে তো তুমি চেনো,রিয়া-র বিয়েতে পরিচয় হয়েছিল তো তোমাদের!" শোনার পর হার্টবিট টা হঠাৎ করে চরম পর্যায় পৌঁছেগেলো,গলদঘর্ম অবস্থায় ভাঙা ভাঙা গলায় বল্লাম,"আজ্ঞে! হয়েছিল তো"। উনি আবার বলতে শুরু করলেন,কিন্তু এর পর যা শুনলাম তাতে আমার সমগ্র চেতনার অবলুপ্তির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।উনি বলেন," আজ সকালে ওর একটা সিয়াস্ অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে,অবস্থা ভাল নয়..আমরা এখুনি ভেলোরের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছি।তাই কষ্ট হলেও একদিন অফিসটা তোমাকেই সামলাতে হবে,এটা জানানোর জন্যই ফোনটা করেছিলাম,আচচ্ছা! আমরা রওনা দিচ্ছি,রাখছি এখন"। বলেই উনি ফোনটা কেটে দিলেন। আমার মথায় তখন বাজ পরার অবস্থা।শত চিন্তা মাথায় আসছিল,মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল একবার বস্ কে ফোন করি ও কেমন আছে জিজ্ঞেস করি,কিন্তু একটা অজানা ভয়ে সে রাতে আর কিছুতেই কল করা হল না।

       পরের দিন ভোর ৫ টা নাগাদ বিশ্রী রকমের ঘাম দিয়ে মনটা কেমন উথাল পাথাল করতে লাগল। আর থাকতে না পেরে বস্ কে একটা কল করে বসলাম।ফোনটা তোলা মাত্রই জিজ্ঞেস করলাম,স্যার! 'করবী' কেমন আছে? উনি কোনো জবাব দিলেন না, মিনিট চারেক ধরে আমি একই প্রশ্ন করতে থাকায় তিনি এবার কান্নায় ভেঙে পরলেন,আর এদিকে ওনার এরূপ আচরন আমায় নিথর করে তুলছিল। আমি নিজেকে সামলে আবার প্রশ্ন করলাম, স্যার! স্যার! করবী কেমন আছে বলুন না? হৃদয় বিদারীত কান্না মাখা জবাব ভেসে এল ওপার থেকে," করবী আর নেই"...আমি কি বলবো কি করবো কিছুই স্থির করে উঠতে পারছিলাম না,বুকের ভেতরে যেন হাজার খানেক পরমাণু একসাথে বিস্ফোরিত হচ্ছে.....এবার আমিও কান্নায় ভেঙে পড়লাম।আর কিছু ভেবে চিন্তে রিএ্যাক্ট করতে পারছিলাম না। কিছুক্ষন পর নিজেকে একটু সামলে গুমরে উঠে আবার প্রশ্ন করলাম,কি হয়েছিল স্যার?

      তিনি বল্লেন," শুনলাম সম্প্রতি 'করবী' নাকি একটা বেড়াল ছানা পুষতেআরম্ভ করেছিলো,সেই বেড়াল ছানাটি নাকি ওদের বাগানে খেলতে খেলতে বাড়ির দরজা পার হয়ে রাস্তায় ছুটে চলে যায়...আর ওকে ফেরৎ আনতে গিয়েই 'করবী' এক ছুটে রাস্তার মাঝখানে চলে যায়,আর তখনি একটি গাড়ি......"
 
        এরপর তিনি আর কি কি বলেছিলেন কিছুই আর শুনতে পাইনি,নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না,আমার দেওয়া উপহারে....আর কিচ্ছু ভাবতে পারছিলাম না,আসতে আসতে কেমন যেন চেতনাহীন হয়ে পরেছিলাম।

      আজ ২৮ শে জুন,পেরিয়ে গেছে গোটা একটা বছর।বাড়ির সামনের বগানটাতে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে উজ্বল প্রানচ্ছল রক্তাভ করবী ফুল,ঠিক আমার করবীর মতন। 
                                            (সমাপ্ত)

Comments

Popular Posts

Wave Us @