Be Our Friend

বি-চেতনা

 লেখায়ঃ আকাশ 

 


 
<1> (i)ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিন্ নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ ।
অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো
ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে ॥
বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরাণি ।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্য-
ন্যানি সংযাতি নবানি দেহী গীতা ২/২০ গীতা ২/২২ 
(আত্মার কখনও জন্ম হয় না বা মৃত্যু হয় না, অথবা পুনঃ পুনঃ তাঁর উৎপত্তি বা বৃদ্ধি হয় না৷ তিনি জন্মরহিত শাশ্বত, নিত্য এবং পুরাতন হলেও চিরনবীন। শরীর নষ্ট হলেও আত্মা কখনও বিনষ্ট হয় না।মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, দেহীও তেমনই জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করেন।) []
 
(ii) Energy can neither be created nor destroyed; rather, it can only be transformed or transferred from one form to another.[ According to Law of Conservation]

<2> (i) মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ ।
মনঃষষ্ঠানীন্দ্রিয়াণি প্রকৃতিস্থানি কর্ষতি ॥
(গীতা ১৫/৭)
(এই জড় জগতে বদ্ধ জীবসমূহ আমার সনাতন বিভিন্নাংশ। জড়া প্রকৃতির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ফলে তারা মন সহ ছয়টি ইন্দ্রিয়ের দ্বারা প্রকৃতিরূপ ক্ষেত্রে কঠোর সংগ্র্রাম করছে।)

(ii)"A system becomes more stable when its energy is spread out in a more disordered state"[According to 3rd law of thermodynamics] 

 "আমি" কে? "আত্ম-শক্তি" কি? বিশ্বের সব শক্তির উৎস কি একই? মৃত্যু বা ধ্বংসের পর শক্তির কি হয়? এইসবের জানার আগ্রহ কম-বেশি সবার। "কম" না "বেশি" টাই সবার। আমারও ছিল এবং আছেও। এই নিয়ে অনুসন্ধান আর সাথে বিতর্ক দুইই চলছে জোরকদমে। 
বিভূতিভূষণের "দেবযান" এ মৃত্যুর পরে শক্তিরাশির কি পরিণতি হয় তার সুন্দর আধ্যাত্মিক বর্ণনা আছে,  স্বামী অভেদানন্দের "মরণের পরে" তে কিছুটা বিজ্ঞান ভিত্তিক। তবে আর যাই হক, এর গুঢ় রহস্য উতঘাটনের জন্য "বিশেষ জ্ঞান" থেকে "বিশেষ চেতনা"র  বশবর্তী হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। কারন সত্যিকারের "চেতনা" থেকেই "যুক্তি" আসে আর  "যুক্তি" থেকেই "বিশেষ জ্ঞান"। আমি,এখানে, যা চেতনা থেকে উপলব্ধি করেছি, তাইই বিশ্লেষণ করার চেস্থা করেছি। 
তবে তথাকথিত "বিশেষ জ্ঞান" বা " আধ্যাত্মবাদ" দুটি দিয়েই এটার বিচার করতে গেলে হোঁচট খেতে হতে পারে। আবারও বলছি এটা শুধুমাত্র আমার যুক্তিবাদী চেতনার মোড়কে এক উপলব্ধি মাত্র। 

শক্তি বা আত্মা আসলে যেকোনো প্রাণী বা জীবের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সক্রিয়তা বা অবস্থানের পরিমাপ। বিজ্ঞানে এই শক্তির নানা নাম। পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় "চলশক্তি বা গতিশক্তি", রসায়নে "জৈব রাসায়নিক শক্তি", আবার জীববিদ্যা বলে,"জৈবশক্তি"।
শক্তির ধ্বংস বা সৃষ্টি সম্ভব নয়,পরিবরতন সম্ভব। বিজ্ঞান অনুযায়ী শক্তির ধারনা এইটুকুই।
কিন্তু বিজ্ঞানের পেছনেও এক চেতনা থাকে। "বিশেষ চেতনা" ছাড়া "বিশেষ জ্ঞান"ও সম্ভব নয়। তাইতো বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল , চলমান। আজকের যা "বিশেষ জ্ঞান" কয়েক শতাব্দি পরে তা "বিশেষ" থাকবে না। newton এর gravity বা আইনস্টাইনের relativity সবই পরিবর্তিত হতে পারে। চেতনা ছাড়া জ্ঞান সম্ভব নয়। বিশেষ জ্ঞান সীমিত কিন্তু বিশেষ চেতনা পরিব্যাপ্ত।
এবার তাহলে জ্ঞান সরিয়ে চেতনাকে আধার করে ভাবা যাক, "শক্তি" আসলে কি? শক্তি হল এই বিশ্ব-ব্রম্ভান্ডের দেখা-অদেখা যত পদার্থ আছে সবার প্রকৃত পরিচয়। শক্তি ছাড়া কোন পদার্থএর ই অস্ত্বিত্ব থাকেনা, থাকা সম্ভব নয়। আমি, আপনি, গাছ,পাথর, অনুজীব,পশু-পাখি,ঘর-বাড়ি গ্রহ-নক্ষত্র সব একই গঠনমুলক এবং বন্ধন মুলক শক্তি দিয়ে তৈরি। শক্তি বা আত্মা সবার এক এবং অদ্বিতিয়। তার কোন ভিন্নতা নেই। মৌলিক শক্তির(আত্মা) ভিত্তিতে আমরা সবাই এক এবং অভিন্ন, বাহ্যিক গঠন যাই হোকনা কেন।
ব্রম্ভান্ডের সব ধরনের পদার্থএর,ভরের উদ্ভবই এক বিশ্ব শক্তি থেকে। আপনি,আমি,সব কিছুই বিশ্ব-শক্তিরই অংশ, এক নদীর অনেক শাখানদীর মত। প্রতিনিয়ত বিশ্ব-শক্তি থেকে কিছু অংশ একত্রিত হচ্ছে, এক "গঠন" তৈরি করছে, আবার সেই "গঠন" নষ্ট হয়ে "শক্তি" ব্রহ্মাণ্ড এ মিশে যাচ্ছে। "আত্মা পরমাত্মা থেকেই সৃষ্টি ,পরমাত্মাতেই বিলীন।"
 তাহলে এখন প্রশ্ন হল "আমি" কে? "আমি" বলতে আসলে নিজের আত্মাকে বোঝায়, অর্থাৎ "নিজস্ব শক্তি" আর এই "নিজস্ব শক্তি"র উৎপত্তিই "বিশ্ব-শক্তি" থেকে অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে "আমি"ই "বিশ্ব-শক্তি", "আমি"ই  ব্রহ্মাণ্ড, যা আছে বিশ্বে সবই "আমি"। আর গীতার মূল কথাই এটা। এর মধ্যে কোন অযৌতিকতা আমি অন্তত খুঁজে পাইনি। অর্জুন যখন কুরুক্ষেত্রে নিজের আত্মিয়-স্বজনদের দেখে ইতস্তত করছিল, তখন কৃষ্ণ 'বিশ্বরূপ" দেখিয়েছিল, বা গান্ধারি কেও কৃষ্ণ বলেছিল, কুরুক্ষেত্রে "আমিই আমাকে মেরেছি" মানে আসলে "নিজশক্তি" একই, তার রূপই শুধু ভিন্ন(এখানে কৃষ্ণ কে আমরা একটা আত্ম-শক্তি হিসাবে ধরে নিতে পারি)। 
কেউ কাও কে ঘৃণা করলে বা ভালবাসলে, আসলে এক "নিজ"কেই ভালবাসে বা ঘৃণা করে। তার বাইরে কিছুই না। 
এবার এই "শক্তি" ভিত্তিগত এবং উৎসগত ভাবে এক হলেও, ব্যক্তি ও বস্তুগত ভাবে এর প্রকৃতি ভিন্ন। যার প্রধান দুটিপ্রকৃতি,স্থিতিশীলতা(stability) এবং অস্থিতিশীলতা(instability)। এই দুই প্রকৃতিই জীব বা জড়ের মানসিক বা অভ্যন্তরীণ সক্রিয়তার পরিচয় বহন করে। 
এখন,অস্থিতিশীলতার লক্ষ্যই  স্থিতিশীল হওয়া,বিশ্ব-ভারসাম্যের নিয়ম। তাই "অশান্ত" শক্তি "শান্ত" হতে ছোটে বিভিন্ন অবাঞ্ছনীয়, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি বা ক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে। ঝড়,সুনামি,ভুমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাতের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা খুন-জখম,রাহাজানি,ধরসন,আত্মহত্যার মত অপরাধ-মুলক ক্রিয়া সবই ঘটে এক  অনিয়ন্ত্রিত অস্থিতিশীল শক্তির "স্থিতিশীল" হতে। তাই যেকোনো অস্থিতিশীল শক্তিই ধংসাত্বক , স্থিতিশীল শক্তি সৃষ্টিশীল। মৃত্যু বা ধ্বংস তো ভৌত অবস্থার অন্তিম এবং আত্ম-শক্তির প্রথম অবস্থা মাত্র।
এবার প্রশ্ন হল  "অস্থির শক্তি"কে "স্থির" করার উপায় কি? তার একমাত্র উপায় "সাধনা"। না, না, "সাধনা" ব্যপারটা কখনই কোন তথাকথিত "ভগবান,ধর্ম" কেন্দ্রিক নয়। "সাধনা" এর প্রকৃত অর্থ হল কোন সৃষ্টিশীল শান্তিময় বিষয়ের অপর মননিবেশ করা, একনিষ্ঠ হওয়া। "সাধনা", বিজ্ঞানেরও হতে পারে শিল্পের হতে পারে, কোন ধর্মের হতে পারে ,কোন নির্দিষ্ট মূর্তি বা ভগবানের হতে পারে বা অন্য কোন সৃষ্টিশীল ,কল্যাণমূলক কাজেরও হতে পারে। এবার নাস্তিকরা বলে "ভগবান" অনর্থক বা কুসংস্কার। কিন্তু আসলে "নাস্তিক" বা "আস্তিক" বলে কিছুই হয় না। আগেই বলেছি সবই একই শক্তি।
কোন আত্ম-শক্তি যদি "ভগবান" বা নির্দিষ্ট কোন "ঐশ্বরিক নাম" এর জন্য স্থিতিশীল হয়, সে তো তার আরাধনা করবেই।বিজ্ঞানের নামের মতই। স্থিতিশীলতা যেকোনো শক্তির একমাত্র এবং অন্তিম লক্ষ্য। কোন সংস্কারকে "কু" তখনই বলে যখন তা অযৌতিক ভাবে কোন আত্ম-শক্তি বা বিশ্ব-শক্তির ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করছে বা ক্ষতি করছে।

তাই, শুধু "জীব" কে নয়, প্রকৃতির যেকোনো বস্তুকে ভালবাসা,সহানুবতি,মায়া-মমতা এবং স্রিস্তিশিল,হিতকর কাজের মধ্যে দিয়েই আত্ম-মনের free energy কমে আর এটা তো বিজ্ঞানও জানে free energy কমলে stability আসে। 
 কোন কিছুর সুক্ষ রহস্য ,কারন বিশ্লেষণ করতে হলে আগে "বিশেষ চেতনা" "দার্শনিক স্বত্বা" র জাগরনের প্রয়োজন, যা ভৌত পরিবেশে "বিশেষ জ্ঞান" রূপে আত্মপ্রকাশ করে। আর এটা তো সত্যিও, "অ‍্যারিস্টটল","কোপারনিকাস" "গ‍্যালিলিও" "নিউটন"
"আইনস্টাইন" "জগদিসচন্দ্র" এদের মতো আরও অনেক বিজ্ঞানীরা একাধারে তো বড় দার্শনিকই ছিলেন," বিশেষ চেতনা"র সাধনা করতেন। "বিজ্ঞান", যুক্তিবাদী "বিশেষ চেতনা"র ফল মাত্র। 
      সর্বশেষে এটাই বলার, ব্রহ্মাণ্ডের সব কিছুই মৌলিক এবং ভিত্তিমুলক শক্তিতে একই। জন্ম বা সৃষ্টির সময় থেকেই প্রত্যেকেই  শুধু একটা কাল্পনিক নাম/ পরিচয় বহন করে চলে, মানুষের ক্ষেত্রে তো ধর্ম,বর্ণ জাতি, কতকি...! 
এই বিশ্ব-সংসারে সবাই সবার সাথে যুক্ত, সবাই  সবার কাছের।

                    वसुधैव कुटुम्बकम।
            ( The world is one family)
     
  
 
 
 
 

Comments

Post a Comment

Popular Posts

Wave Us @