Be Our Friend

রক্তকরবী____ পর্ব-৩

 ✎ মহিরূহ সেনগুপ্ত

.

..আমরা মোট ৬ বার দেখা করেছিলাম। প্রথম ও দ্বিতীয় বার ওর ইউনিভার্সিটির আশপাশে,তৃতীয় বার পার্কে আর তার পরের তিন বার কফি হাউসে। হিসেব রাখবার জন্যে কোনো প্লান তো ছিল না,কিন্তু প্রত্যেক বার দেখা করার পর যে রাতগুলো জেগে জেগে কাটিয়েছিলাম সেগুলো তো আর ভোলার নয়। একসাথে সময় কাটানোর ফলে এইটুকু বুঝতে পেরেছিলাম যে,দেবী চন্ডী কিন্তু আদবে খুব শান্ত,ঠিক আমার মনের মতন। হ্যাঁ! তার রাগ আছে প্রচুর,তবে তা তার কাছের মানুষ গুলোর জন্যে একদমই নয়। তা জোটে তার জন্যে আগন্তুক বিরক্তিকর মানুষ গুলোর কপালে। আর সেই চন্ডীরূপ দর্শনের সাধ আমার এজনমের মতন মিটেছে।

   ওর বেড়াল ছানা খুব পছন্দের ছিলো,ভাগ্যক্রমে ওর জন্মদিনটাও পড়েছিলো এই শুভ মাসের মধ্যেই,২৮ শে জুন।আমি ওর জন্যে একটা দুধে আলতা রঙের বেড়াল ছানা কিনে ওকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলাম। ওর কাছে এটা অপ্রত্যাশিত ছিলো।আমি ভাবছিলাম " যাক! ওকে তাহলে সারপ্রাইজ টা দেওয়া গেল"। ওই পুচকে ছানাটিকে পেয়ে ওর ওই কাজলা চোখে আনন্দের যে দ্যুতি দেখতে পেয়েছিলাম,তা আজো মনে পরলে শত ক্লান্তিতেও হৃদয়টাকে জুরিয়ে যায়। তবে এই উপহারে খুশি হয়ে ও আমাকে যে উপহারটি দিয়েছিলো তাতে সেও আমাকে সারপ্রাইজ্ দিয়েছিলো বটে! বেড়াল ছানাটিকে বিছানার ওপর রেখে ও কিছুক্ষনের জন্য ঘরের বাইরে গেল....আর যখন ফিরলো দেখি কাদা মাটি মেখে হাতে একটা করবীর চারা নিয়ে এল।খানিকটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলাম,ওটা কি? সে বলেছিলো,"এটা! এটা একটা রক্তকরবীর চারা।আমদের বাগান থেকে তুলে আনলাম"। আমি এবার আরো অবাক হয়ে বল্লাম,"কিন্তু হঠাৎ!" উত্তরে ও বললো,"বাবা ফুলগাছ খুব ভালো বাসেন,আমাদের বাগানের বেশির ভাগ গাছই ফুলের গাছ।কিন্তু সব ফুলের মধ্যে বাবার করবীটা একটু বেশি পছন্দের,আর এই কারনেই আমার নামটাও রেখেছিলেন তারই নামে। আর এটা তোমায় দিচ্ছি কারন! এই ছানাটি যেমন আমায় তোমার কথা মনে করাবে ঠিক তেমনি এই চারাটি একাধারে যেমন আমাদের সম্পর্কের দীর্ঘতার হিসেব রাখবে তেমনি প্রতিদিন সকালে এর থেকে নির্গত হওয়া স্নিগ্ধ বাতাসের মঞ্জরী তোমার নিঃশ্বাসে মিশে তোমায় আমার কথা মনে করিয়ে দেবে"...দেবী চন্ডীকে প্রথম বারের জন্য সেদিন লজ্জা পেতে দেখেছিলাম।
  ৩০ তারিখের সকাল থেকেই ওর সাথে দেখা করবার জন্য খুব ইচ্ছে হচ্ছিল।আগের দিন অফিসে কাজের চাপে ব্যস্ত থাকার কারনে দেখা তো দূরের কথা ফোনে কন্ঠস্বরটুকু শোনার সুযোগ টুকুও পাইনি।এদিকে ওকে কত কিছু বলার আছে,আমি যে ওর দেওয়া করবী চারাটার জন্যে কাকভোরে উঠে বাড়ির সামনে আস্ত একটা বাগান বানিয়ে ফেলেছি,তা কি আর ওকে না জানিয়ে থাকা যায়..
  এদিকে অফিসে পৌঁছে এই প্রথম বার বস্ এর উপর ভীষণ রাগ হচ্ছিলো।আজকেই তাকে অফিসে আসতে হল না।শুধু একটা ফোন আর তাতে বল্লেন,"অনিন্দ এক-দু দিন তুমিই অফিসটা সামলিও বুঝলে,আমি একটু বিপদের মধ্যে পরেছি,এখনি একটু বাইরে যেতে হচ্ছ ঠিক আছে"। কন্ঠস্বরটাও কেমন যেন একটু গম্ভীর লাগলো।কিন্তু তবুও কেন যাচ্ছেন! কোথায় যাচ্ছেন! জিজ্ঞেস করার ইচ্ছেটুকুও হলনা কেন জানিনা। তার পরে সন্ধ্যেবেলায় আবার তার ফোন এল,কিন্তু এবার রাগ পরে মনে এক চাপা ভয়ের জন্ম নিয়েছে।তাহলে কি বস্ আমাদের সম্পর্কের সম্বন্ধে জেনে গেছেন! দুরু দুরু বুকেই ফোন টা রিসিভ্ করলাম,ওপার থেকে বস্ বল্লেন...     

Comments

Popular Posts

Wave Us @